জামালপুর জেলা সম্পর্কে বিস্তারিত
জামালপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাংশের অঞ্চল। ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত। বিশেষ করে কৃষি পণ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। জেলাটি রেল পথে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট, এবং বাহাদুরাবাদ ঘাট ও ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, এবং মেঘালয় (ভারত) এর সঙ্গে রাস্তা দ্বারা সংযুক্ত। কৃষি প্রধান এ অঞ্চলে মূলত প্রধান ফসলের মধ্যে ধান, পাট, আখ, সরিষা বীজ, চিনাবাদাম, এবং গম হয়।ভারত থেকে আমদানিকৃত পন্য ও রপ্তানির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হল জামালপুর। দেশের সবথেকে বড় সার কারখানা(যমুনা) রয়েছে জামালপুরে ।
জামালপুর জেলা বুড়ির দোকানের রসমালাই, ছানার পোলাও এবং ছানার পায়েসের জন্য বিখ্যাত । জামালপুর হস্ত শিল্পের জন্যও বিখ্যাত। ভারত থেকে আমদানিকৃত পন্য ও রপ্তানির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হল জামালপুর।
#ইতিহাস :
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, দিল্লির সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে (১৫৫৬-১৬০৫) হযরত শাহ জামাল নামে একজন ধর্মপ্রচারক ইয়েমেন থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ২০০ জন অনুসারী নিয়ে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। পরবর্তীতে ধর্মীয় নেতা হিসাবে তিনি দ্রুত প্রাধান্য বিস্তার লাভ করেন। ধারণা করা হয়, শাহ জামাল-এর নামানুসারে এই শহরের নামকরণ হয় জামালপুর। ময়মনসিংহ জেলার অধীনে ১৮৪৫ সালে জামালপুর মহকুমা গঠিত হয়। ভয়াবহ বন্যায় যমুনা নদীর সৃষ্টির পরে জামালপুর মহকুমার সিরাজগঞ্জ থানাকে পাবনা জেলার সাথে জুড়ে দেওয়া হয় ১৮৫৫ সালে। দেওয়ানগন্জ থানা রংপুর জেলা হতে ১৮৬৬ সালে জামালপুর মহকুমায় যুক্ত করা হয়। এরপর ১৮৭৯ সালে টাংগাইল মহকুমা গঠিত হলে মধুপুরসহ বেশ কিছু এলাকা জামালপুর মহকুমা হতে টাংগাইল মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ থেকে পৃথক করে জামালপুরকে বাংলাদেশের ২০ তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৪ সালে জামালপুর জেলা ভেঙ্গে শেরপুর জেলা গঠন করা হয়।
# প্রশাসনিক সমুহ
জামালপুর জেলা ৭টি উপজেলা, ৭টি থানা, ৮টি পৌরসভা, ৬৮টি ইউনিয়ন, ৮৪৪টি মৌজা, ১৩৪৬টি গ্রাম ও ৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
# মক্তিযুদ্ধে জামালপুর ইতিহাস :
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জামালপুর একটি অন্যতম অধ্যায়। যুদ্ধকালীন সময়ে সারাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। জামালপুরকে ১১ নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১১ সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে কর্ণেল তাহের ও জেনারেল জিয়াউর রহমান। উইং কমান্ডার বিডি হামিদুল্লাহ খান উপ-সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। এ জেলায় ৫০০০ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন । এতে ৮১ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ বরণ করেন, শহীদ হন প্রায় ১৪০ জন এবং প্রায় ৫০০ জন নিরীহ লোককে গণহত্যার শিকার হতে হয়েছে। তাছাড়া ৩০০ জন মহিলাকে নির্যাতন করা হয়। বেশীরভাগ যুদ্ধ সংগঠিত হয় ধানুয়া কামালপুর, নারায়নখোলা এবং সরিষাবাড়ীতে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের লাশই পাওয়া যায়নি। জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর এবং ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকা সামরিক যুদ্ধের কৌশলতগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভারতীয় মিত্রবাহিনী মহেন্দ্রগঞ্জ দিয়ে বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর হয়ে যুদ্ধকার্য পরিচালনা করে। মুক্তিযোদ্ধাগণ বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জের সানন্দবাড়ী ও কাঠারবিলে ক্যাম্প স্থাপন করে এখান থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে প্ররোচিত করে। এ সময় দেওয়ানগঞ্জ এবং বাহাদুরাবাদ ঘাটে পাকহানাদার বাহিনীর লক্ষ্যবস্ত্তর উপর আক্রমণ চালানো হয়। ১৩ নভেম্বর ধানুয়া কামালপুরে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে প্রচন্ড যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তাহের। এ যুদ্ধেই কর্ণেল তাহের বাঁ পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাগণ মরণপন যুদ্ধে হানাদার বাহিনী দীর্ঘ ২১ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পূর্ব রণাঙ্গনের হানাদার বাহিনীর সুরক্ষিত ঘাঁটি কামালপুরের পতন হয়। এ যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন আহসান মালিকের নেতৃত্বে ২২০ জন সৈন্য আত্মসমর্পন করে। যুদ্ধে অনেক পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিনসহ ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা এতে শহীদ হন। এ যুদ্ধে হানাদার বাহিনী পরাজয়ের পর দিশেহারা হয়ে যান এবং রণভংগ হয়ে জামালপুর, টাংগাইল এবং ময়মনসিংহের দিকে পিছু হটতে থাকে। মিত্র বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রচন্ড প্রতিরোধ গড়ে তুললে হানাদার বাহিনী মনোবল হারিয়ে ফেলে এবং একের পর একের এক পরাজয় বরণ করায় মুক্তিযোদ্ধাগণ বিজয়ের পথে অগ্রসর হতে থাকে। এদিকে ঝিনাই ব্রীজ, নান্দিনা বানারের রেল ও জেলা বোর্ডের ব্রীজটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয় ফলে হানাদার বাহিনীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা অত্যন্ত বিপদে পড়ে যায়।অবশেষে ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে ৫৭২ জন জোয়ান ৩১ বেলুচের ক্যাপ্টেন শমশাদসহ আত্মসমর্পন করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার ধানুয়া কামালপুর হাই স্কুল, জামালপুর শহরের পিটিআই ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস, মেলান্দহ উপজেলার পয়লা ব্রীজ, ঝিনাই ব্রীজ, বানার রেল ব্রীজ ও জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কের বানার ব্রীজ, বাউসী ব্রীজ, সরিসাবাড়ী, দেওয়ানগঞ্জ হাই স্কুলসহ বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরীহ মানুষকে ধরে এনে যে সব ক্যাম্পে হত্যা এবং নির্যাতন করত তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হল:- জামালপুর পিটিআই, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস, ছনকান্দা শ্বশানঘাট, আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রী হোস্টেল, নান্দিনা নেকজাহান হাই স্বুল, বকশীগঞ্জ এন এম উচ্চ বিদ্যালয়, মেলান্দহ উপজেলার মেলান্দহ হাই স্কুল এবং সরিষাবাড়ী উপজেলার আরামনগর কামিল মাদ্রাসা ও জগন্নাথগঞ্জ ঘাট উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযোদ্ধাসহ যুদ্ধে নিহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জামালপুর শ্মশানঘাট ও ফওতী গোরস্থান, সরিষাবড়ীর ইস্পাহানী ও বারইপটলসহ জগ্মনাথগঞ্জ ঘাটে গণকবর দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য জনাব এনায়েত হোসেন সুজা (দেওয়ানগঞ্জ), মোঃ আনিছুর রহমান ও মোঃ আব্দুল হাকিম (সরিষাবাড়ী) এবং সৈয়দ সদরুজ্জামান হেলাল (মেলান্দহ) কে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
১। জামালপুর জেলার পূর্ব নাম কি
উত্তর : সিংহজানী
হিন্দু সন্ন্যাসীদের আগমনে এবং তাদের পদচারণায় অঞ্চলটি "গঞ্জের হাট" থেকে "সন্ন্যাসীগঞ্জ" হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ক্রমান্বয়ে হিন্দু জমিদারদের উদ্ভব হলে সন্ন্যাসীগঞ্জকে মৌজা তৈরি করে এর নাম রাখেন "সিংহজানী"। এই সিংহজানী মৌজা থেকেই আজকের জামালপুর জেলা ।জেলা শহরের দুইটি বিদ্যালয়ের নামের সাথে সিংহজানী নামটি আজও সমুন্নত।
২। জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি গণ?
উত্তর :
৩।জেলা প্রশাসক নাম: শ্রাবস্তী রায়
৪। জামালপুর৷ আয়তন কত?
উত্তর : ২,০৩১.৯৮ বর্গকিমি (৭৮৪.৫৫ বর্গমাইল)
৫। জনসংখ্যার ঘনত্ব কত?
উতর: ১,২০০/বর্গকিমি (৩,০০০/বর্গমাইল)
৬। সাক্ষরতার হার : ৭৩.০৭%
৭। জেলার নাম করন : ১৯৭৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ থেকে আলাদা করে দিয়া হয়।
৮। জামালপুর উপজেলা / থানা : ৭ টি। যথা : ১.জামালপুর সদর, ২.বকশিগঞ্জ, ৩.দেওয়ানগঞ্জ, ৪. ইসলামপুর, ৫.মেলান্দহ, ৬. মাদারগঞ্জ, ৭.সরিষাবাড়ি
৯। জামালপুর পৌরসভার : ৮ টি। জামালপুর সদর,বকশিগঞ্জ,দেওয়ানগঞ্জ,ইসলামপুর,মেলান্দহ, হাজরাড়ি,মাদারগঞ্জ, ও সরিষাবাড়ি।
১০। জামালপুর ইউনিয়ন : ৬৮ টি ইউনিয়ন
১১। জামালপুর মৌজা : ৮৪৪ টি
১২। জামালপুর গ্রাম : ১৩৪৬ টি
১৩। জামালপুর সংসদীয় আসন : ৫ টি। ১ নং বকশিগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ, ২ নং ইসলামপুর, ৩ নং মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ, ৪ নং সরিষাবাড়ি ও ৫ জামালপুর সদর
১৪। জামালপুর সার খানার নাম : যমুনা
১৫। মুক্তিযুদ্ধে কত নং সেক্টর ছিল: ১১ নং সেক্টর ছিল
১৬। সেক্টর কমান্ডার হিসেবে কে ছিল : কর্ণেল তাহের ও জেনারেল জিয়াউর রহমান
১৭।
0 মন্তব্যসমূহ