যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব মানুষ

রমজান আলী , মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি



জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার পাকরুল এলাকায় যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন এখন চরম মানবিক বিপর্যয়ের রূপ নিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান নদীভাঙনে ইতোমধ্যে সাত শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।


প্রতিদিনই নতুন নতুন বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে পাকরুল ও কাঠমার বিভিন্ন অংশে ভাঙনের তীব্রতা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।


ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো রাস্তার পাশে, বাঁধের ওপর কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ত্রাণ সহায়তা, বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।


স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর এবং স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মাঝে মাঝে জিওব্যাগ ফেলার মতো সাময়িক কার্যক্রম চালানো হলেও সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।


পাকরুল গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, “যমুনা নদী আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে—ভিটেমাটি, ফসলি জমি, এমনকি স্কুল-মসজিদও। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।”

আরেক বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, “আমরা একসময় গ্রামের শতাধিক পরিবার একসঙ্গে বসবাস করতাম। নদীভাঙনে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।”


এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য আহজার উদ্দিন ফকির জানিয়েছেন, গত তিন বছরে পাকরুল গ্রামের প্রায় ৬০ ভাগ অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। এখনো ৪০ ভাগ এলাকা রক্ষা করা সম্ভব, যদি জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।


পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, “দেড় হাজার মিটার এলাকা রক্ষায় একটি প্রকল্প প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”


এলাকাবাসীর দাবি, শুধু জরুরি ত্রাণ নয়, নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেই এই মানবিক বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তারা অবিলম্বে সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।