জেব্রা ফিশের জাদু—পুড়ে যাওয়া হৃদযন্ত্রও
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গ্রামবাংলার পুকুর, খালবিল বা ধানক্ষেতের পাশে সহজেই চোখে পড়ে আঙুলের মতো ছোট্ট একটি মাছ—ডোরাকাটা গায়ে বৈশিষ্ট্য নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এই মাছটির নাম জেব্রা ফিশ। দেখতে নিরীহ মনে হলেও এই মাছটি ধারণ করে আছে এক অভাবনীয় জাদুমন্ত্র—আমাদের শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গগুলোকে পুনরায় গড়ে তোলার ক্ষমতা!
সম্প্রতি ভারতের পুনের আগরকর রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বিভাগের বিজ্ঞানী অধ্যাপক চিন্ময় পাত্র এবং গবেষক দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন, এই জেব্রা ফিশ হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, যকৃত, অগ্ন্যাশয় এমনকি মেরুদণ্ড পর্যন্ত নতুন করে গঠনে সক্ষম। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘ডেভেলপমেন্ট’-এ।
জেব্রা ফিশ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জেব্রা ফিশ সাধারণত ২-৩ বছর বাঁচে এবং মাত্র ৩ মাস বয়স থেকেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়। গবেষণায় ব্যবহৃত মাছগুলোর বয়স ছিল ৬ মাস, অর্থাৎ পরিপূর্ণভাবে প্রাপ্তবয়স্ক। এই বয়সের মাছদের ব্যবহার করে দেখা গেছে, তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হার্ট নিজেই পুনরায় গড়ে উঠতে সক্ষম। মানুষের বা অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা নেই।
আরেকটি বিশেষত্ব হলো, জন্মের ১০-১৫ দিনের মধ্যেই জেব্রা ফিশের হৃদযন্ত্রসহ শরীরের সব অঙ্গ বাহ্যিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য হয়ে ওঠে। এ কারণে গবেষকদের জন্য এটি একটি আদর্শ মডেল প্রাণী।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
এই গবেষণায় ভারতের পাশাপাশি অংশ নেয় জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট ফর হার্ট অ্যান্ড লাং রিসার্চ এবং আমেরিকার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার। দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বর্তমানে জার্মানির গোথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর কার্ডিওভাসকুলার রিজেনারেশন-এ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ হাজার গবেষণাগারে এখন জেব্রা ফিশ নিয়ে গবেষণা চলছে। এই মাছটি একসময় গ্রামবাংলার শিশুদের খেলাধুলার সঙ্গী ছিল, আজ তা হয়ে উঠেছে বিশ্ববিজ্ঞানীদের গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু।
উপসংহার
প্রাচীন বাংলার পরিচিত ছোট মাছটি এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের দ্বার খুলে দিয়েছে। হয়তো খুব শিগগিরই হৃদরোগের জটিলতা নিরাময়ে এই মাছই হতে পারে আমাদের সবচেয়ে বড় সহায়।
সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন, ডেভেলপমেন্ট জার্নাল
0 মন্তব্যসমূহ