ম্যানেজমেন্ট বাড়ল, কাজ কমল



একটি কোম্পানিতে ছিল এক নিষ্ঠাবান কর্মী পিঁপড়া। প্রতিদিন সকাল ৯টায় সময়মতো অফিসে যেত সে, কারো সঙ্গে সময় নষ্ট না করে সরাসরি কাজে লেগে যেত। তার কাজের গতি ছিল বিস্ময়কর। সে একাই এত কাজ করত যে কোম্পানির উৎপাদন বেড়ে গিয়েছিল চোখে পড়ার মতো।


এই দৃশ্য দেখে সিইও সিংহ খুব খুশি হলেও মনে মনে ভাবল— "সুপারভিশন পেলে পিঁপড়া আরও ভালো করতে পারবে।" তখনই সে নিয়োগ দিল এক অভিজ্ঞ সুপারভাইজার— তেলাপোকা।


তেলাপোকা অফিসে ঢুকেই বলল, “অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম তো থাকা উচিত।” শুরু হলো সময় মাপার খাতা, হাজিরা মনিটরিং। এরপর সে নিজের কাজের চাপ কমাতে নিয়োগ দিল একটি মাকড়সাকে, যে টেলিফোন ধরবে আর রিপোর্ট টাইপ করবে।


এইসব দেখেশুনে সিংহ খুশি হয়ে বলল, “দারুণ চলছে তো সব!”

তেলাপোকাও নানা গ্রাফ, চার্ট আর রিপোর্টে বোঝাতে লাগল, কে কত কাজ করছে।


এত বিশ্লেষণের মাঝেও তেলাপোকার মনে হলো, “আইটি ডিপার্টমেন্ট না থাকলে তো চলবে না!”

নিয়োগ পেল এক মাছি, যিনি কম্পিউটার আর প্রিন্টারের দেখভাল করবেন।


এদিকে, পিঁপড়ার দিন কাটে এখন কাগজপত্র, মিটিং আর ফরমালিটির মধ্যে। তার মূল কাজের সময় আর থাকেই না। ধীরে ধীরে উৎপাদন কমে যায়, তার গান গাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।


সিংহ তখন ভাবল, “এবার পিঁপড়ার বিভাগের আলাদা একজন প্রধান দরকার।”

নিয়োগ পেল ঝিঁঝিপোকা। এসে প্রথমেই বলল, “আমার জন্য আরামদায়ক চেয়ার চাই, আরেকটা কম্পিউটার আর সহকারী লাগবে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান বানাতে।”



অফিসের পরিবেশ একসময় যেটা প্রাণবন্ত ছিল, তা হয়ে উঠল বোঝা স্বরূপ। সবাই চুপচাপ, মুখ গোমড়া। ঝিঁঝিপোকা জানাল— “এখানে কর্মপরিবেশ উন্নয়ন জরুরি।”

সিংহ ভাবল, ঠিকই তো। নিয়োগ দিল এক বিখ্যাত কনসালট্যান্ট পেঁচা।


তিন মাস পর্যবেক্ষণের পর পেঁচা রিপোর্ট দিল— “অতিরিক্ত কর্মী আছে, ছাঁটাই করতে হবে।”

আর সবচেয়ে প্রথমেই ছাঁটাই হলো সেই পিঁপড়া, যে একসময় ছিল কোম্পানির প্রধান চালিকাশক্তি। কারণ রিপোর্টে লেখা ছিল, “এ কর্মীর মোটিভেশন কম এবং নেতিবাচক মনোভাব অফিসের পরিবেশ নষ্ট করছে।”



---


গল্পের শিক্ষা:


অতিরিক্ত প্রশাসনিক ভার, অপ্রয়োজনীয় মিটিং ও কাগজপত্র শেষ পর্যন্ত প্রকৃত কর্মীদের কাজের ক্ষতি করে। যারা সত্যিকারের কাজ করে, তাদের উপেক্ষা করলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়ে। শেষ পর্যন্ত বলির পাঁঠা হয় সেই নিষ্ঠাবান কর্মী, যে একসময় প্রতিষ্ঠানের মূল ভরসা ছিল।